ঔষধি গাছের ব্যবহার পদ্ধতি Method of use of medicinal plants
রসুন একটি ঝাঁঝালো সবজি যা রান্নার মশলা ও ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতকে চীন ও ভারতে রক্ত পাতলা রাখার জন্য এর প্রচলন ছিল। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিস রসুন ব্যবহার করেছিলেন সারভাইকাল ক্যানসারের চিকিৎসায়। রসুন শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এর গুণাগুণও শরীরে খাবারের উপকারিতা বাড়ায় । ঠাণ্ডায় শরীরকে সুস্থ ও উষ্ণ রাখতে রসুন হতে পারে একটি চমৎকার বিকল্প। প্রতিটি চিকিৎসা অনুশীলনে রসুনের বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতা বিবেচনা করা হয় । কিন্তু আপনি কী জানেন রসুনের রং শুধু সাদা নয়, রসুনের রঙ কালো এবং কালো রসুনের পুষ্টি ও গুণাগুণ দুটোই সাদা রসুনের চেয়ে অনেক বেশি ৷ কালো রসুন সুপারফুডটি শীতের এক নিরাময়।
রসুনের যত উপকার:
রক্তনালী পরিষ্কার রাখতে ও স্বাভাবিক রক্তচলাচলে রসুনের উপকারিতা অনেক। এতে রয়েছে ‘অ্যাজোইন’ নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। এ পদার্থ নির্বিঘ্নে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে এবং রক্তজমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। এছাড়াও রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে। হৃদরোগজনিত সমস্যায় এটি একটি ভীষণ কার্যকর ওষুধ। ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণিত এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।রসুনে থাকা ‘অ্যালিসিন’ নামক পদার্থ শরীরের বিভিন্ন ক্ষত সারাতে উপকারী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও শরীরের রোগজীবাণু ধ্বংস করে।
* শীতের সময়ে ঠান্ডা লাগা কিংবা গলা বসে যাওয়া, গলাব্যথা, গেঁটেবাত, হাঁপানি কিংবা ব্রংকাইটিস সমস্যায় কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়ার বিধান রয়েছে
* রসুনে থাকা সালফার আমাদের শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থিগুলোকে সচল রাখে ও প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ করতে সাহায্য করে।
* হজমের সমস্যা দূর, লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়া ও এলার্জির সমস্যা সারিয়ে তুলতে রসুন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
* আয়ূর্বেদ শাস্ত্রমতে, মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে রসুন উপকারী। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার যেমন প্রোস্টেট, মূত্রথলি ও ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধেও রসুন দারুন কাজ করে।
* রসুন খেলে যৌনতা বৃদ্ধি পায়। যৌন অক্ষমতা থেকে মুক্তি পেতে রসুনের জুড়িমেলা ভার।
দৈনন্দিন খাবার রান্নায় কমবেশি সবাই রসুন ব্যবহার করেন। এছাড়াও রসুনের তৈরি আচার স্বাদে অনন্য। বেশি উপকার পেতে হলে প্রতিদিন অন্তত ২ কোষ রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন। সালাদ, স্যুপের সঙ্গেও রসুন ব্যবহার করা যেতে পারে।
কারো কারো ক্ষেত্রে রসুন খেলে পাকস্থলীতে সমস্যা দেখা যেতে পারে কিংবা এলার্জি বেড়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যা দেখা গেলে আপাতত কাঁচা রসুন খাওয়া বাদ দিতে পারেন। এছাড়াও যাদের কোথাও কেটে গেলে সহজে রক্তপড়া বন্ধ হয় না তারাও এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কেনন, রসুন শরীরে রক্তজমাট বাঁধার ক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।
ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিকের মত কাজ করে রসুন চা, কেমন করে তৈরি করবেন?
রসুন বা রসুন প্রতিটি ভারতীয় রান্নাঘরে সহজেই সন্ধানের উপাদান। যাইহোক, রসুন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাবারের স্বাদ এবং গন্ধ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। তবে রসুনে রয়েছে অনেক ওষধি গুণ এবং পুষ্টিকর উপাদান। রসুন আমাদের অনাক্রম্যতা বাড়ানো, শরীরকে ডি-টক্সিং করা এবং পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করার মতো কার্য সম্পাদন করে।
এই কারণে রসুন দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সার অনুশীলনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক চিকিত্সা গবেষণায় রসুনের চিকিত্সার গুণগত মান গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রসুনেরও বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রসুন আমাদের দেহে পাওয়া অ্যামিনো অ্যাসিড হোমোসিস্টাইন হ্রাস করে, যার ফলে রক্তে চিনির উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন সকালে এক কোয়া রসুন খেলে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাগুলি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যার কার্যকর উপায় হল 'গার্লিক-টি' বা রসুন চা।
যেভাবে তৈরি করবেন রসুন-চা
রসুন-চা পান করার উপকারিতা
পুষ্টিবিদরা রসুন-চা এর ওষধি গুণ নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে রসুন-চায়ে উপস্থিত রসুন এবং দারুচিনি উভয়ই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এর সঙ্গে এই দুটিতে আরও অনেক ওষধি গুণাগুণও পাওয়া যায় যা অন্যান্য অনেক রোগ নিরাময়ে উপকারী।
নিয়মিত রসুন খাওয়ার ফলে অ্যামিনো অ্যাসিড হোমোসিস্টাইন হ্রাস হয়, যার ফলে রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ কারণে হৃদরোগে উপকার হয়। রসুনে পাওয়া সালফার টিউমার কোষের সঙ্গে লড়াই করার জন্য কাজ করে। রসুন অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ যা আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
