তেজপাতার গুণাগুণ এবং উপকার

  ঔষধি গাছের ব্যবহার পদ্ধতি  Method of use of medicinal plants

তেজপাতা


সৌন্দর্য চর্চায় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে 
তেজপাতা। আমরা অনেকেই জেনে অবাক হবো, মশলা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সৌন্দর্য চর্চায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই তেজপাতা


  • ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে ...
  • ত্বক উজ্জ্বল করতে ...
  • শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে ...
  • খুশকি দূর করতে ...
  • দাঁত উজ্জ্বল করতে

তেজপাতার ১০ ঔষধি গুণ

তেজপাতা একটি সুগন্ধিযুক্ত ঔষধি পাতা। স্যুপ, পায়েস, পোলাও ও অন্যান্য সিদ্ধ জাতীয় খাবারে সুগন্ধ যোগ করতে এ পাতা ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন গ্রীকে ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরিতে তেজপাতা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। আসুন জেনে নেই এর ১০টি ঔষধি গুণ সম্পর্কে।

চুলের বৃদ্ধি ও খুশকি তাড়ায়
খুশকি ও চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে বিপাকে আছেন? চুলের যত্নে তেজপাতায় রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কয়েকটি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন।

কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার এ পানি দিয়ে চুল ও স্কাল্প ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর এটি করবেন। মাথার ত্বক চুলকাচ্ছে? তেজপাতা বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মেশান। স্কাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
একটি গবেষণায় দেখা যায় দিনে অন্তত দু’বার তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে। এটি প্রমাণ হয়েছে যে, তেজপাতায় থাকা উপাদান ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন তাদের জন্যেও তেজপাতা বেশ উপকারী।

হজমে সাহায্য করে
কোষ্ঠকাঠিন্য? তেজপাতা আপনার স্বাভাবিক হজমশক্তি ফিরিয়ে আনবে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। অতিরিক্ত প্রস্রাবের সমস্যা কমায় ও হজম রস তৈরিতে এটি উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। তেজপাতায় থাকা এনজাইম দ্রুত খাবার ভাঙতে পারে ফলে যারা অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য তেজপাতা অনেক উপকারী।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
তেজপাতায় রয়েছে রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

ব্যথা উপশম করে
তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা এমনকি বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। তেজপাতা ও রেড়ির পাতার (ক্যাস্টর) পেস্ট আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই ব্যথা কমে যাবে। এছাড়া পাতার তেল কপালে ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা থাকবে না।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে
কিছু গবেষণায় দেখা যায় তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।

ক্ষত নিরাময় করে
তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।

গলা খুশখুশ ও কাঁশি
আপনি যদি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন ও কাঁশির সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে এটি আপনাকে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে। ৪-৫টি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে বুক মুছুন। কয়েকবার এটি করুন। আর খেয়াল রাখবেন পানি যেনো খুব বেশি গরম না হয়।

কিডনির পাথরের চিকিৎসায়
একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।

উদ্বিগ্নতা ও চাপ কমায়
যদি দিনের শেষে আপনার মনমেজাজ ভালো না লাগে তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি আপনার স্নায়ু শান্ত করে ও উদ্বিগ্নতা কমায় এমনকি ভালো ঘুমের জন্যেও উপকারী।

সতর্কতা
তেজপাতা গর্ভবতী মা ও সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটাতে পারে। এছাড়া সার্জারি রোগীদের দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয় কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।


রূপচর্চায় তেজপাতার যত ব্যবহার 

সৌন্দর্য চর্চায় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে তেজপাতা। আমরা অনেকেই জেনে অবাক হবো, মশলা হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সৌন্দর্য চর্চায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই তেজপাতা। আধুনিক বিজ্ঞানও এটা স্বীকার করে। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে এটি।

এছাড়াও তেজপাতা থেকে পাওয়া তেল বিভিন্ন দামি পারফিউম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এর বাকল থেকে পাওয়া তেল সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। চলুন দেখে নেই ত্বকের যত্নে ও সৌন্দর্য চর্চায় তেজপাতার গুণাগুণ।

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে  
তেজপাতার উদ্ভিজ্জ উপাদান ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী ফ্রি র‌্যাডিক্যাল  নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর জন্য মুখে তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ নেয়া যেতে পারে । তেজপাতা সেদ্ধ করা পানির ভাপ অ্যান্টি এইজিং সলিউশন হিসেবে কাজ করে।

ত্বক উজ্জ্বল করতে
বিউটি ক্রিমের দৌরাত্ম্য শেষ হয়নি আমাদের জীবনে। কিন্তু ইতিমধ্যেই আমরা সৌন্দর্য চর্চায় ভেষজ উপাদানের সহায়তা নিচ্ছি ত্বক উজ্জ্বল করতে। তেজপাতা ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করতে পারে। কীভাবে? বেশি পানিতে তেজপাতা সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ পানি ঠাণ্ডা করুন। তারপর সে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তেজপাতা সেদ্ধ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত মুখ ধোয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ার পাশাপাশি ব্রণের জন্যও এটি উপকার করবে।

শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে 
তেজপাতার গুঁড়ো গরম পানিতে ভিজিয়ে স্নান করলে শরীরের দুর্গন্ধ কমে । কত কিছুই তো আমরা ব্যবহার করি শরীর থেকে দুর্গন্ধ তাড়াতে। এবার শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে প্রায় বিনা পয়সার একটি টিপস দেওয়া যাক আপনাদের। রান্নার জন্য কেনা শুকনো তেজপাতা গুঁড়ো করে নিন। পরিষ্কার এক টুকরো কাপড়ে গুঁড়ো তেজপাতা দিয়ে পুঁটলি বাঁধুন। গুঁড়ো তেজপাতার সেই পুঁটলি কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন কুসুম গরম পানিতে। তারপর সে পানি দিয়ে স্নান সেরে নিন। শীতে গরম পানিতে স্নান করার অভ্যাস আমাদের আছে। এ সময় এই টিপসটি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। একদিন তেজপাতা গুঁড়ো দিয়ে স্নান করলেই হবে না। এটা চালিয়ে যেতে হবে এক নাগাড়ে কিছুদিন।

খুশকি দূর করতে
আপনার প্রিয় ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু মাঝে মাঝে শ্যাম্পুর জায়গায় তেজপাতা সেদ্ধ করা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুল পড়াও কমে যাবে। চুল পড়ে যাওয়া জায়গাগুলোতে তেজপাতার এসেনশিয়াল ওয়েল ব্যবহার করুন। তাতে চুল আর উঠবে না।

দাঁত উজ্জ্বল করতে
মাঝে মাঝে দাঁতে কাচা তেজপাতা ঘষে নিলে দাঁত উজ্জ্বল হয়। ব্রাশ তো প্রতিদিন করেনই। সেটা অব্যাহত রাখুন। নিয়ম করে মাঝে মাঝে দাঁতে কাচা তেজপাতা ঘষে নিন। কাচা তেজপাতা মাউথওয়াশ হিসেবেও কাজ করবে আপনার মুখে।

Post a Comment

Previous Post Next Post